1400 বছর আগে আরবের বাজার :

তৎকালীন আরবের ১২টি bazar

মক্কার লোকজনের উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম ছিল ব্যবসা। তারা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়িক সফরে সিরিয়া, ইয়েমেনে যেত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ব্যবসায়িক সফরে সিরিয়া যান। একবার যান বাল্যকালে চাচা আবু তালিবের সাথে, আরেকবার যান খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিবের বাবা ছিলেন হাশিম ইবনে আব্দে মানাফ। তিনি ব্যবসায়িক সফরে সিরিয়ায় যান এবং সেই সফরে ইন্তেকাল করেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাবা আব্দুল্লাহও ব্যবসায়িক সফরে ইন্তেকাল করেন।

দুজনই যেখানে ইন্তেকাল করেন, সেখানে তাদেরকে দাফন করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সেই রক্তধারার উত্তরাধিকারী, যার বাবা এবং পরদাদা ব্যবসা করতে গিয়ে প্রবাসে ইন্তেকাল করেন।
কুরাইশরা বছরে মূলত দুটো বড় বাণিজ্যিক সফরে যেত। শরৎকালে তারা যেত সিরিয়ায়, শীতকালে ইয়েমেনে।’

তাছাড়া কুরাইশরা তিনটি বাজার নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করত। যেগুলো ছিল-উকাজ, মাজান্নাহ, যুল-মাজায। এই বাজারগুলো সাধারণত হজের সময় বসতো। জাহিলি যুগেও মক্কায় হজ হতো, হজের উদ্দেশ্যে মানুষজন মক্কায় আগমন করত। কুরাইশরা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করত।

আরো পড়ুন

বর্তমান সময়ের মতো সেই যুগে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাজার সারাবছর থাকত না। বাজারগুলো ছিল মেলার মতো। একমাস বা পনেরো দিন এক জায়গায় বাজার বসতো, তারপর সেই বাজার অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতো। এভাবে ব্যবসায়ীরা সারাবছর আরবের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা করত।

তৎকালীন আরবে যেসব bazar ছিল, সেগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:

১. দুমাতুল জান্দাল:

দুমাতুল জান্দাল ছিল জাহেলি আরবের বিখ্যাত বাজার। এটি জাওফ এলাকায় অবস্থিত। রবিউল আউয়ালের ১ তারিখ থেকে মেলা বসতো, পনেরো দিন পর্যন্ত মেলাটি চলত। মেলাটি নিয়ন্ত্রণ করত কালব এবং গাসসান গোত্র।
২. আল-মুশাক্কার বাজার:

এই বাজার বসতো হাজরের দুর্গে। জুমাদাস সানি মাসে বাজারটি বসতো এবং পারস্যের ব্যবসায়ীরা সাগর পাড়ি দিয়ে এই বাজারে আসত।

৩. হাজার বাজার:

রবিউস সানি মাসে এই বাজার বসতো। বাহরাইনের রাজা আল- মুনজির ইবনে সাওয়াহ ছিলেন এই বাজারের নিয়ন্ত্রক। খেজুরের জন্য বিখ্যাত এই বাজারে ভারত এবং পারস্যের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে আসত।

৪. ওমান বাজার:

ওমানের বাজারে আরব ব্যবসায়ীরা যেত হাজরের বাজারের বেচা-বিক্রি শেষ করে। এটা ছিল জাহেলি আরবের অন্যতম পুরনো বাজার।

৫. সুহর বাজার:

সুহর বাজার ছিল আরবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এই বাজারে আরবের পূর্বাঞ্চলের পণ্য আসত বলে আরবদের কাছে বাজারটির গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। রজব মাসের ১-৫ তারিখের মধ্যে বাজার বসতো, শেষ হতো ২০ রজব।
৬. দিবা বাজার:

ওমানের পূর্বাঞ্চলে এই বাজার অবস্থিত ছিল। রজব মাসের শেষে এই bazar শুরু হতো।

৭. হুবাশাহ বাজার:

তিহদামা অঞ্চলে এই বাজার অনুষ্ঠিত হতো। আরবের পশ্চিমাঞ্চলের পণ্য হুবাশাহ বাজারে পাওয়া যেত। রজব মাসে অনুষ্ঠিত বাজারে হিজাজ এবং ইয়েমেন থেকে ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করত।”

৮. আল-সিহর বাজার:

দিবা বাজারের কার্যক্রম শেষে ব্যবসায়ীরা সিহর বাজারে পৌঁছাত।

৯. আদন বাজার:

রমজান মাসের প্রথমদিন থেকে এই বাজার শুরু হতো। এই বাজার ছিল সুগন্ধীর জন্য বিখ্যাত। বাজারটি দশদিন ধরে চলত। কর ব্যবস্থার শিথিলতার কারণে বাজারে বিক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত।”
১০. সানা বাজার:

সানা বাজার শুরু হতো রমজান মাসের মাঝামাঝিতে। রমজান মাসের শেষ দিনগুলোতে এই বাজারে পণ্য কেনা-বেচা হতো। এই বাজারে চামড়া, তুলা, রং বিক্রি হতো। পোশাক শিল্পের সাথে যারা জড়িত ছিল, তারা পণ্য কিনতে সানা বাজারে যেত।

১১. উকাজ বাজার:

উকাজ বাজার ছিল আরবের সবচেয়ে বিখ্যাত বাজার। এটা ছিল জাজিরাতুল আরবের সবচেয়ে বড় বাজার। এই বাজারে শুধু পণ্য বিক্রয় হতো না, আরবের কাছে এই বাজারের সাংস্কৃতিক গুরুত্ব ছিল। মেলার সময় এখানে কবিতা প্রতিযোগিতা হতো। এই বাজার ছিল ট্যাক্স ফ্রি। ফলে, ব্যবসায়ীরা উকাজ বাজারে পণ্য বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। মদ, ঘি, পোশাকের জন্য এই বাজার বিখ্যাত ছিল। হাজর, ইরাক, গাজা, বসরা, ইয়েমেন থেকে ব্যবসায়ীরা উকাজ বাজারে পণ্য নিয়ে আসত।

১২. মাজাল্লাহ বাজার:

উকাজ মেলা শেষ হবার পর ব্যবসায়ীরা মাজান্নাহ বাজারে পণ্য নিয়ে যেত। এই বাজার বসতো জিলক্বদের শেষ দশদিন। মদপ্রেমীদের জন্য মাজান্নাহ বাজার বিখ্যাত ছিল।

Leave a Comment